স্বাস্থ্য খাত একটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতের অগ্রগতি নির্ভর করে দক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারীদের উপর। কিন্তু এর বাইরেও আছে এমন কিছু প্রশিক্ষিত পেশাজীবী, যারা নিঃশব্দে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্ত ভিত্তি দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন দুটি প্রতিষ্ঠান হলো: IHT (Institute of Health Technology) এবং MATS (Medical Assistant Training School)। অনেকেই এই দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম শোনেননি বা জানেন না এগুলো আসলে কী করে। এই লেখায় আমরা বিস্তারে জানবো IHT ও MATS কী, এখানে কী ধরনের শিক্ষা দেওয়া হয়, কিভাবে ভর্তি হওয়া যায় এবং পাস করার পর কী ধরনের পেশাগত সুযোগ রয়েছে।
IHT ও MATS বলতে কি বুঝায়?
IHT (Institute of Health Technology) হচ্ছে সরকারি স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মেডিকেল প্রযুক্তি বিষয়ক ডিপ্লোমা কোর্সে শিক্ষা গ্রহণ করে। আর MATS (Medical Assistant Training School) হলো এমন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানে শিক্ষার্থীরা "মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট" হবার জন্য প্রশিক্ষণ পায়। এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানই স্বাস্থ্যসেবার মধ্যম পর্যায়ের মানবসম্পদ তৈরি করে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে রয়েছে:
২৩টি IHT (ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজি)
১৬টি MATS (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল)
এসব প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরে অবস্থিত, যেন সারা দেশের শিক্ষার্থীরা সমানভাবে সুযোগ পায়।
IHT-তে শিক্ষার্থীরা নিচের ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজি কোর্সগুলোতে ভর্তি হতে পারে: (কোন ডিপার্টমেন্ট এর কি কাজঃ ভিডিও)
ফিজিওথেরাপি টেকনোলজি
ল্যাবরেটরি টেকনোলজি
রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং টেকনোলজি
ফার্মেসি
রেডিওথেরাপি টেকনোলজি
অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজি
ইনটেন্সিভ কেয়ার টেকনোলজি
প্রতিটি কোর্সই ৪ বছর মেয়াদি, যার মধ্যে ফিল্ড ট্রেনিং অন্তর্ভুক্ত থাকে। (আপনার জন্য কোন ডিপার্টমেন্ট ভালো এটা বুঝতে ভিডিওটি দেখুন)
MATS-এ কী পড়ানো হয়?
MATS-এ শুধু একটি কোর্স পড়ানো হয়: Diploma in Medical Faculty বা DMF
কোর্সটি ৪ বছর মেয়াদি — চার বছর একাডেমিক লেখাপড়া শেষে জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ আছে।
কোর্স শেষে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে শিক্ষার্থীরা মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে সক্ষম হয়। (ম্যাটসে ভর্তি হওয়া ঝুকিপূর্ণঃ ভিডিও)
যোগ্যতা:
শুধুমাত্র এসএসসি (বিজ্ঞান বিভাগ) পাস শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে।
এসএসসি পাসের সাল থেকে পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যায়।
জীববিজ্ঞান থাকতে হবে এবং সর্বনিম্ন জিপিএ ২.৫ থাকতে হবে।
এইচএসসি লাগবে না। ❌
আবেদন প্রক্রিয়া: (আবেদন করার পদ্ধতিঃ ভিডিও)
প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট হওয়ার পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও টেলিটকের এটাচড ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়।
আবেদন ফি ৭০০ টাকা (টেলিটক প্রিপেইড নম্বর থেকে)।
ভর্তি পরীক্ষা:
১০০ নম্বরের MCQ পরীক্ষা নেয়া হয়। (ভর্তি প্রস্তুতি যেভাবে নেবেনঃ ভিডিও)
বিষয়ভিত্তিক মার্কস বিভাজন:
বাংলা: ১৫, ইংরেজি: ১৫, গণিত: ১৫
পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান: প্রত্যেকটি ১৫
সাধারণ জ্ঞান: ১০
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারে।
ফিজিওথেরাপি, ল্যাব, রেডিওলজি বা ফার্মেসি অর্থাৎ নিজ নিজ বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে পারে।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে — BSc in Health Technology, বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা সম্ভব।
উপজেলা/ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ পায়। তবে, বর্তমানে সরকারি সার্কুলার বন্ধ আছে দীর্ঘদিন।
কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসক সহকারী হিসেবে কাজ করে। এখানে, এখনো নিয়োগ চালু হয়নি তবে হবে ইন শা আল্লাহ্।
পরবর্তীতে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ সীমিত হলেও অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থান গড়ার সুযোগ।
ম্যাটস এর চাকরি কেন্দ্রিক সুযোগ কিছুটা কম এর কারণ জানতে ভিডিও দেখুন।
IHT ও MATS বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এমন একটি স্তর তৈরি করেছে, যেখান থেকে প্রশিক্ষিত ও দায়িত্বশীল স্বাস্থ্যকর্মী সরবরাহ করা যায়। তারা সরাসরি চিকিৎসা না দিলেও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে মূল সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে।
যারা স্বল্পসময়ে স্বাস্থ্যসেবার সাথে যুক্ত হতে চান, তাদের জন্য IHT ও MATS হতে পারে একটি কার্যকর পথ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে একজন তরুণ সহজেই সমাজে নিজের অবস্থান গড়ে তুলতে পারে — সেবামূলক কাজের মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎ যেমন গড়া যায়, তেমনি দেশের স্বাস্থ্যখাতেও দেওয়া যায় বড় অবদান।